আজ একটা হেস্তনেস্ত
করব বলেই লেখা। শুরুতেই লিখতে ইচ্ছা করছে, "To whom it may concern" -
লিখলাম না। তা বাপু সবাই পড়ো।
আমার সাথে দেখা হলে - ফোনে,
মেসেজে, ফেসবুকে মায় টুইটারে পর্যন্ত্য একই প্রশ্ন, "তা বিয়ে করো নি কেন? বয়স
তো অনেক হল (তা মিছে বলব না, বেলা অনেক হয়েছে, মেঘের আড়ালে না, পুরোপুরি
নীলাকাশে)। এবার করো বিয়েটা?"
নাও। কি প্রশ্ন, বিয়ে করিনি
কেন? আচ্ছা এরা কি জানে না, কানাকে কানা বা খোঁড়াকে খোঁড়া বলতে নেই! আর জানলেই বা
কি হবে। আমাদের দেশে শিষ্টাচার কে কবে মেনেছে?
বলি বিয়ে করতে কার না সাধ
হয়। কিন্তু না হলে কি করব! লোকশোনানো কিছু কথা আছে যদিও, যেমন, "ইচ্ছা
নেই".. "মনটা হরির স্যান্ডেলে গিয়ে এমন ফেভিকুইকের মত চিপকেছে যে সংসারে
নামানো দায়!"... সব ডাঁহা মিথ্যাকথা।
আসল কথা হল বিয়ে করার কিছু
যোগ্যতা তো থাকতে হয়। আমি ভালোমানুষের মেয়েদের কোন দোষ দিই না। বলি তারা যে আমায়
বিয়ে করতে চাইবে, তার কিছু কারণ তো থাকা দরকার! অমন মা সীতা বা দ্রৌপদীর মত বোকা
মেয়েটি এখন আর পাবে না বলে রাখলুম। আজ যদি ওঁদের সোয়ামীরা বনে যেতেন, ওঁনারা সোজা
বলে দিতেন, "দেখ বাপু, নিজে যাচ্ছ যাও। আমি যেতে পারব না। সিরিয়ালগুলো হেভি
জমে আছে। ও ছাড়া যাবে না। দেওর, শাশুড়ি ঠিক ম্যানেজ করে নেব। তুমি শুধু
ওয়াটস-অ্যাপটা অন্ রেখো। আর ভাল ছবি পেলে মাঝে মাঝে ফেসবুকে আপডেট দিও না গো,
শেয়ার করব!"
সে কথা যাক। বিয়ের যোগ্যতা নিয়ে কথা হচ্ছিল। এক এক করে
আসা যাক। পাঠক জল খেয়ে, ইয়ে সেরে একেবারে শান্তিতে বসতে পারেন। এটা খুব জরুরী
বিষয়।
প্রথম যোগ্যতা -
রূপ:
কথায় আছে, প্রথমে দর্শনধারী। আমি মানি। যে সেলফি নিয়ে আমি ধরাধামে অবতীর্ণ হয়েছি
তার গুণগান ব্রহ্মাও চার মুখে কেন, সহস্র মুখেও করতে পারবেন না। নেহাৎ ক্যামেরার
কিছু কারসাজি আছে, তাই ফেসবুকে একখানা ছবি দিতে পেরেছি।
আমার দিদি যখন আমায় পাত্রীস্থ করবার প্রস্তুতি নিচ্ছেন
আমি বারবার ওকে সাবধান করেছিলাম, "দেখ দিদি, চোখে ভাল দেখে এমন মেয়ের বাড়ি
নিয়ে যাস না, যাস না।"
তা কে কার কথা শোনে। তিনি তো ভাতৃপ্রেমে তাঁর ভাইকে
কার্তিক ঠাকুরের ক্লোন ভাবতেই পারেন। তা বলে সব্বাই-এর তো আর সে দশা নয়। আর
শাস্ত্রেও লেখে সত্যের জয় চিরকালই আছে।
হলও তাই। প্রথম দু'জন তো আমার দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে
ছিলেন তার ভাবটা হল এই, "এমন রূপেও বিয়ের সাধ জাগে! বলি দক্ষিণেশ্বর-এর
বাঁদরগুলো কি মরে গেছে যে এর গলায় মালা দেব! মরণ!"
আরেকজন তো শুনেছি শয্যা নিয়েছিলেন কয়েকদিন, আমায় দেখে
দাঁত ছরকুটে পড়ার পর, তাও আমারই সামনে।
শেষের জন ছিলেন সাংঘাতিক। বাড়ির লোককে তিনি বললেন
পাত্রের সাথে তিনি আলাদা কথা বলতে চান একটু।
ব্যবস্থা হল। আবেগে আমার গলা বুজে আসছিল। এই বুঝি ভগবান
ঘাড় তুলে দেখলেন।
উরিব্বাস! তারপর যা হল! সে কি শাসানি রে বাবা! শেষে তিনি
বললেন, "দেখুন, এই থোবড়া যদি আরেকবার এই পাড়ায় দেখেছি, এমন কেস সাল্টাব না,
আগামী চোদ্দজন্ম বিয়ের কথা ভাববেন না।"
আমার যে কি অবস্থা বলে বোঝনো দায়! ফিরে এসে সপ্তাখানেক
বিছানা নিয়েছিলুম, এতটা বলতে পারি।
যা হোক দিদি তো নিরস্ত কয়েকদিনের জন্য।
দ্বিতীয় যোগ্যতা-
গুণ:
এটা আমিও খুঁজছি। পেলে আপডেশান দেব।
আবার দিদির প্রসঙ্গে আসি। এবার তিনি ঠিক করলেন কাগজে
দেবেন। দিলেন। ফোন আসল। সব শুনে কারোর ঘাড়েই দুটো মাথা ছিল না যে আবার ফোন করে।
দিদি দমবার পাত্রী নন। তিনি জানা, অজানা, বাংলা, হিন্দি,
উড়িয়া, ইংরাজি সব কাগজে বিজ্ঞাপন দিতে শুরু করলেন। কোন কোন কাগজে একাধিকবারও,
হতচ্ছাড়াগুলো এমন পাজি, কোনো ছাড় দিত না! কিন্তু তাতে কি! দিদির ভাই এর কাছে টাকা!
ফু:...
সব ব্যর্থ। দিদিকে কোন রকমে তামিল তেলেগু আর বিদেশি
কাগজগুলো থেকে নিরস্ত করতে পেরেছি এই আমার আর নিরীহ বহু ললনার সৌভাগ্যি বলতে হয়!
তৃতীয় যোগ্যতা -
ট্যাঁকের জোর:
পড়াই। মনের আনন্দে। তাতেও বাগড়া।
"কেন চাকরী ছাড়লে বাপু?"
"বেশ করেছি।"
"কেন স্কুলে পড়াও না?"
"ঘন্টার শব্দে আমার কানে তালা লাগে। হল?
শান্তি?"
তা বাপু পড়াই তো। চুরি চামারি তো আর করছি নে! তবে হ্যাঁ।
"কাল যদি ছাত্র না আসে কি করবে?"
"স্কুলের সামনে বই খাতা পেন্সিল বেচব, তবু ওদের
সাথেই থাকব।"
"যদি বসতে না দেয়?"
"স্কুলের ড্রেন টানব।"
"যদি তাও না দেয়?"
"স্কুলের সামনে ভিক্ষা করব, তবু ছাত্র-ছাত্রীদের
সাথেই থাকব।"
এবার বুঝুন। কোন মেয়ের বাপ এসব শুনে মেয়ে দেওয়ার কথা
ভাববেন? আর আমি বলিও না দিতে।
অগত্যা দিদি মাছওয়ালা থেকে জমাদার, সব্জীওয়ালি থেকে
রিক্সাচালক - কাউকেই বাদ রাখলেন না তাঁদের ঘটকগিরিতে লাগাতে (আর খাঁটি ঘটকেরা তো
ঘাগু। তারা সব শুনে সকরুণ দৃষ্টিতে আমায় আপাদমস্তক দেখে সেই যে বিদায় নিয়েছেন তো
নিয়েছেনই)।
ফলস্বরূপ, তাঁরা এখন আমার নিরীহ দিদি নামক প্রাণীটিকে
দেখলেই পালাবার পথ খোঁজেন।
উপরিউক্ত কারণগুলি বিবেচনা করলেই বোঝা যাইবেক কেন আমি বিবাহহীন রহিয়াছি।
এবার এর পজিটিভ দিকটা আলোকপাত করা যাক। হ্যাঁ আছে। যদি
না-ই থাকত তা হলে এতগুলো দার্শনিক জন্মেছিলেন কি কত্তে!
প্রথমত :
সংসারে নাকি সুখ-দু:খের পরিমাণ নির্দিষ্ট। তা হলে আমার
ভাগের কিছু সুখ যদি ছেড়ে দিই সংসারে কারোর সুখের পরিমাণ বাড়তে পারে। একটা রীতিমত
সৎকাজ হল।
দ্বিতীয়ত:
যে হারে জনসংখ্যা বাড়ছে তাতে কিছুটা রাশ তো টানলাম। অমনি
হাসি পাচ্ছে না! এই সময় যদি শ্রীরাম থাকতেন তো বুঝতেন আমার ক্ষুদ্র সেবার মর্ম।
যেমন উনি ছোট্ট কাঠবেড়ালিটারও গুরুত্ব দিয়েছেন সেতু বাঁধতে।
ঠাকুর বলেছেন মন মুখ এক করতে। তাই ফেস - মুখ আর বুক -
মন, ইংরাজি বাংলা এক করে ফেসবুক-এ সব বলে রাখলাম।
এবার শেষ কথাটা বলে শেষ করি। "বয়স হলে তোমায় দেখবে
কে?" কথাটা হল, বয়সকালে কাউকে দেখতে গেলে প্রথম শর্ত আমার নিজের তো বয়সকালটা
দেখতে হবে! দেশের যা চিকিৎসার বহর মনে হয় না অতটা ধাক্কা আমি কাটিয়ে উঠতে পারব।
তাই be positive.
No comments:
Post a Comment