Saturday, June 28, 2014

কান্তাচার্য্য ও গঙ্গা

(কান্তাচার্য্য ও শপিং মল -এর পরবর্তী অংশ) 




     শপিং মল থেকে ফিরে ইস্তক কান্তবাবুর মনে শান্তি নেই পূর্ণ ও খন্ড তাঁর মাথা খন্ড খন্ড করে তুলছে 

     কিসে মেলে এই দুই পরস্পর বিরুদ্ধ ভাব? তিনি হাসপাতাল দেখেছেন, শ্মশান দেখেছেন; দারুখানা দেখেছেন, জেলখানা দেখেছেন কোথায় পূর্ণতা? এ তো শুধু হাহাকার, অসহায়তা গ্লানি আর ধিক্কার তবে? পূর্ণ কি কল্পনা! 
     কান্তবাবু কথা বলা কমিয়ে দিয়েছেন খাওয়া কমে গেছে গিন্নী প্রমাদ গুনছেন পটলা ইতিমধ্যে কতকগুলো ভিডিওগেম জোগাড় করে ফেলেছে বন্ধুদের কাছ থেকে পুঁটিও রান্নাঘরে ঢোকার মহড়া দিতে শুরু করেছে অপেক্ষা শুধু কান্তবাবুর জ্ঞান হারাবার 
     সে দিন কান্তবাবু বাজার করে ফিরছেন সাথে পটলা এটা পটলার মায়ের আদেশ বেশ কয়েকদিন ধরে বাজারের গোলমাল হয়ে যাচ্ছে এই তো সেদিন তারা দেবী একটু পুঁইশাক আনতে বলেছিলেন বলে দু'ব্যাগ ভর্তি করে শুধু পুঁইশাকই আনলেন কান্তবাবু আরেকদিন শুধু কাটা কাতলা, আরেকদিন শুধুই বরবটি আর না তাই সাথে পটলা 
     যা হোক, কান্তবাবু হাঁটতে হাঁটতে বললেন, "পটলা বাজারগুলো মাকে দিয়ে আয় দিকিনি আমি একটু গঙ্গাদর্শন করে আসি।" 
     "আচ্ছা বাবা", বলে দৌড় দিল পটলা 
     কান্তবাবু গঙ্গার ধারে বসলেন সামনে কুলকুল করে ধীরে প্রবাহিণীর দিকে তাকিয়ে তাঁর মনটা শান্ত হয়ে আসল নির্জন চারিদিক হাল্কা বাতাস বইছে হঠাৎ সাইকেলের আওয়াজ শুনে পিছন ফিরে তাকালেন হারু এসেছে পটলার বন্ধু 
     "কাকু এখানে? আজ অফিস জাননি?" 
     "না রে আজ যাব না তুই? স্নান করবি?" 
     "না কাকা, ঠাকুমা গঙ্গাজল আনতে পাঠালেন আজ বাড়িতে সত্যনারায়ণ পূজো আছে কাকিমা জানেন।" 
     তাই তো! হারুর হাতে দুটো ফাঁকা বোতল খেয়ালই করেন নি 
     তিনি "আচ্ছা যা", বলে আবার গঙ্গার দিকে ফিরে বসলেন 
     হারু লাফিয়ে লাফিয়ে নেমে গেল ঘাটে হারু গঙ্গার জল ভরছে ব্যস! কান্তবাবুর মাথা কেমন করতে লাগল বুকের মধ্যে কি যেন সরে সরে যেতে লাগল কি আলো এসে পড়ল চোখে মুখে চিন্তায় 
     দেখলেন পূর্ণ গঙ্গা যুগ যুগ ধরে মানুষ তার প্রয়োজন অনুযায়ী জল নিয়ে চলেছে কলস ভরে, বোতল ভরে, আঁজলা ভরে তবু সেই পূর্ণ গঙ্গা 
     প্রাণের কেন্দ্রে এইরকমই একটি পূর্ণ প্রস্রবণ আছে তাকে প্রেম বলো, আনন্দ বলো তুমি আঁজলা ভরে প্রতিদিন বাইরের সংসারে নিয়ে এসো, সে ফুরোবার নয় প্রতিদিন সেই প্রস্রবণের তীরে পৌঁছানোটাই সাধনা সেই স্রোতের সাথে বিচ্ছিন্ন হলে অন্তরের দারিদ্রতার সীমা থাকে না ধার করে, কৃত্রিম উন্মাদনা সম্বল করে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলতে হয় 
     না,পূর্ণতা কল্পনা না বরং অসম্পুর্ণতাই কল্পনা, খন্ডিত করে দেখা 
     বহুক্ষণ কেটে গেল কান্তবাবু ধ্যানমগ্ন তাঁর মন পাখির মত ভেসে বেড়াচ্ছে অনন্ত চিদাকাশে, চিরপ্রবাহীনীর সম্মুখে 
     এমন সময় পিঠে হাতের স্পর্শ পেলেন 
     "বাবা, মা খেতে ডাকছেন", পটলার ডাকতে এসেছে 
     তিনি ধীরে ধীরে চোখ মেললেন কান্তবাবুর মুখের প্রসন্নতায় পটলার মনটাও ভিজে এলো সে বাবার পাশে বসে পড়ল 
     "কি ভাবছিলে বাবা?" 
     কান্তবাবু ছেলের মুখের দিকে তাকালেন, তাঁর চোখ ভিজে এল 
     তিনি বললেন, "বাবা যাই হোক, জীবনে যত ঝড় আসুক, নিজের মনকে কখনো অবিশ্বাস করবিনি তার ভিতর অসীম শক্তি একটা-দুটো ভুল হল বলে হাল ছেড়ে দিস নি বাবা তুই অনন্তের সন্তান - এ কথা গর্বের সাথে মনে রাখবি দেখবি প্রাণে বল পাবি, মনে উৎসাহ পাবি।" 
     আরো কি বলতে যাচ্ছিলেন কান্তবাবু একদলা কান্না এসে তাঁর গলা চেপে ধরল তিনি ছেলেকে বুকে জড়িয়ে তার কপালে একটা চুমু খেয়ে বললেন, "চল তোর মা অপেক্ষা করছেন।" 
     পটলা বললে, "চলো", বলে সে বাবার হাত ধরলে

No comments:

Post a Comment