(যে বক্তা, তার ভাষায় কখনও এদেশের
টান, কখনও ওদেশের, আসলে তার ওদেশের
শিকড়ে এদেশের মাটি। সে কি করে? যদি বলি সে জেলে তবে যেন তার
ধুতির কোম্পানীর নাম বলা হয়, ধরণ বলা হয় না, তার ধরণ তার কথায়। ভালো লাগলে শোনেন, নইলে আসেন,
ভালো থাকবেন।)
অনুভব, আবেগ প্রকাশ করা যাবে না। বললে তা নিয়ে লোকে
হয়ত হাসাহাসি করবে। অনুভব, আবেগ অনেক কোমল জিনিস, আপনি ওকে নিয়ে বিশ্লেষণ করতে পারেন না, হয় শোনেন
নইলে আমারে যেতে দেন, আমার নিজের কথা, নিজের
অনুভবের ভাষা আপনি বুদ্ধি দিয়ে বুঝবেন কি করে? বুদ্ধি হৃদয়ের
কথা বোঝে? সে তো বোঝে মতলবের কথা। হ্যাঁ, আমার নিজের মতলবের
কথাই সে বলে। কিন্তু আমি যে রাতদিন নিজের মতলবের জন্যে ঘুরে বেড়াই এই কথাটা আপনাকে
কে বলল? আমার দিল নাই? আমার ইচ্ছা
অনিচ্ছা নাই? তবে? আমার জন্য আপনাকে আর
ভাবতে হবে না, আমারে ছেড়ে দেন।
তবে কি জানেন, মনের মধ্যে নদীর যে ওঠা-পড়া, তার কোনো ভাষা নাই। তার
বুকের উপর যে রোদের আলোর মতির বিন্দু, তারও কোনো ভাষা নাই।
দেখেন না, অতবড় আকাশটা কেমন হাঁ কইরে ঐ নদীর মুখের দিকে ঠায়ে
তাকায়ে থাকে! কি খোঁজে বলেন দেখি, আপনি তো এত পড়ালেখা জানা
মানুষ, কি খোঁজে বলেন দেখি? পারবেন না।
আপনাদের বুকের ভিতর বইয়ের পাতার শ্যাওলা জমে জমে এত পুরু হয়েছে যে আপনি ওই রাস্তায়
আর হাঁটনের সাহস পান না, না? আমি বুঝি।
আপনাদের মত মানুষ দেখলি আমার মায়া হয়। মনে
হয় এত্ত বড় একখান মাথা লইয়া ডাঁইয়ে-বাঁইয়ে কোনো দিকে রেখেই আর শান্তি পাচ্ছেন না,
তাই না? আপনারা নিজের কথা কইতে পারেন না,
না? সব সময় হিসাব করি দেখতে হয়, কথাটার কত ওজন হল, না? আরে
হাল্কা কথা বলবেন পাখির মত আকাশে উড়ে যাবে, আর ভারি কথা
বলবেন বুকের ভিতর নোঙর গেড়ি থাকবে, কথা বলতি এত ভাবেন কেন?
মনের ওই ঢেউ, ওই হল ভাব। ওকে বাঁধা যায় না। নদীর ওই বাঁদিকটায় তাকান, দেখেন কেমন খাঁড়ি কেটে নদীর জল ভরে রেখেছে, ওতে ঢেউ
দেখসেন, নেই। কখনও কখনও আসে, যখন আসে
তাকে এখানকার লোকে কয় দুর্যোগ। নদীর জোয়ার ভাঁটাকে কেউ দুর্যোগ বলে শুনেছেন?
শোনেননি, শুনবেনও না। তো ওই ঢেউরে কেউ বাঁধতি
পারে না। আপনি নৌকা চড়েছেন? চড়েননি, শুধু
ওই ভোঁ দেওয়া বড় বড় স্টীমার চড়েছেন, জানি তো। যদি চড়তেন,
যদি একটা রাত থাকতেন আমাদের নৌকায় তবে জানতেন, নদীর সাথে মনের কথা কেমন মিশে মিশে যায়। অতলের কথা কেমন নদী ঠিক টেনে বার
করে নেয়। নদী চায় না কিছু, দেয়। আপনার কথা আপনাকেই ফিরিয়ে
দেয়। তাই বলি মনের কথা বলার ভাষা না পেলে নদীর কাছে আসেন। বন্ধু না পেলে নদীর ধারে
আসেন, কাউরে না কাউরে পাবেনই, নদীর
ধারে অনেক মানুষ কথা শুনতেই আসে। যেমন এখন আমায় পেলেন।
আজ আমি আসি, যাবার আগে আবার বলে যাই, ভালোবাসা আর না বাসা,
এই নিয়ে সংসার। হয় আপনি এদিকে, নয় ওদিকে। সব
মানুষকেই জীবনে এদিক ওদিক করতে হয়, ওই নিয়ে অত মাথা ঘামাবেন
না, নদী দেখেন, জীবন নদী, দুই পাড়ই আছে, ভালোবাসার ঘাট, না
ভালোবাসার ঘাট, পালে হাওয়া যেদিকে লাগল গেলেন, অযথা দাঁড় টেনে মরেন কেন রাতদিন?
(ছবি, সুমনের)
No comments:
Post a Comment