সংসারে অকারণে কাহারও উপর নির্ভর করিতে নীতিবোধে পীড়া জাগে। সেই
কারণে নখের স্পর্ধা উৎপাটন করিতে কদাপি আধুনিক সভ্যতার যুগান্তকারী আবিষ্কার ধাতব
নখকর্তককে আপন করি নাই। আপনার দন্তরাজির ইনসিজার নামক প্রকৃতি প্রদত্ত কর্তক
দ্বারাই নখের স্পর্ধাকে শাসন করিয়া আসিয়াছি এ যাবৎকাল।
নিন্দুকে প্রশ্ন করিবেন,
তবে পদাগ্রের নখরাজির ব্যবস্থা করো কিরূপে?
উত্তরে বলিতে হয়, তত্ত্বগতভাবে পদখানি মুখের সম্মুখে লইয়া আসা, অথবা
দন্তসমেত মুখখানি পদের কাছে লইয়া যাওয়া অসম্ভব নহে। কিন্তু তাহা করি নাই। কারণ
আপনার চরণে মাথা নোয়াইয়া আপনাকে অহংকারি দ্বিজ বলিয়া জগৎকূলে প্রতিষ্ঠা করিতে চাহি
না। সেই ক্ষেত্রে ধাতব নখকর্তকের প্রয়োজন স্বীকার করি, সে
কথা অবশ্য মানি।
সমস্যা হইল এই রাজশক্তি ও জীবাণুশক্তির
সংঘর্ষে উপস্থিত নানা অভূতপূর্ব নিয়মাবলি। অকস্মাৎ গোচরে আসিল আপনার হস্তযুগল
জুড়িয়া নখরাজির কি নিদারুণ আত্মম্ভরিতা! বুঝিলাম, আমার দন্ত
আমার নখরাজির চারিত্রিক শুদ্ধতার উপর আস্থা হারাইয়াছে। কিন্তু ইহাদের সম্পর্কের এই
ভাঙন আমার অজান্তেই ঘটিয়া থাকিবে। আমার বারংবার হস্ত প্রক্ষালন নিশ্চয় আমার
দন্তরাশির নজর এড়ায়নি। সে সন্দেহবশবর্তী হইয়া আপনাকে নিরস্ত করিয়াছে বুঝিতে আমার
বেগ পাইতে হইল না। কিন্তু এমন একটা সদভ্যাস, এমন
আত্মনির্ভরশীলতার অনুশীলন মাত্র জীবাণু ভয়ে ত্যাগ করিব? হইতে
পারে না।
এখন হইতে ছাগকে যেমতি
বলিদানের নিমিত্ত স্নান করাইয়া শুদ্ধভাবে দেবীর সম্মুখে আনয়ন করা হইয়া থাকে,
আমিও সেইরূপ নখরাজিকে বিবিধ স্যানেটাইজার, কঠিন-তরল সাবানে পরিশুদ্ধ করিয়া দন্তরাশির সম্মুখে আনিয়া বলি, এইবার শুরু করো তোমার মদমোহবিনাশী নিষ্ঠুর লীলা।
এই কথাগুলি এই জন্যে
লিপিবদ্ধ করিলাম যাহাতে কেহ যদি এমন সংকটে পড়িয়া থাকেন তবে যেন সদ্য নিষ্কৃতি পান।
আর একটি কথা, যাহারা এই সু এবং দীর্ঘ অনুশীলনে প্রাপ্ত অভ্যাসটিকে নিন্দা করেন,
শিল্পের মর্যাদা না দিয়া নানাবিধ পীড়ার ভয় দেখান, তাহারা হয় শিল্প বোঝেন না, নয় অর্থনীতি। বলি
ঔষধিগুলি বানাইয়াছে কাহাদের মুখ চাহিয়া? ক্রয় করিবার যদি
কেহ না থাকে?
[ছবি Suman]
No comments:
Post a Comment