মাথার মধ্যে দুটো গামলা বসানো। একটা পুরোনো গামলা, একটা নতুন। মন কি করছে, পুরোনো গামলা থেকে এক খাবলা
তুলে নিয়ে নতুন গামলায় আনছে, আবার নতুন গামলা থেকে এক খাবলা
তুলে নিয়ে পুরোনো গামলায় রাখছে।
অনেকক্ষণ ধরে
দেখার পর বললাম, মন, বলি থামলে হয় না? মন থমকে
গিয়ে দুটো গামলার মাঝে দাঁড়িয়ে বলল, কেন?
বললাম, সামনে তাকা,
দেখ কি সুন্দর চাঁদটা উঠেছে, গঙ্গার ধারের
হাওয়া গাছগুলোর রোদে পোড়া পাতাগুলোকে ঝালরের মত দুলিয়ে যাচ্ছে, ওই দেখ ছোট্টো একটা প্রদীপ জ্বেলে নৌকার সামনের জেলে চলেছে মাছ ধরতে....
বলতে
বলতে দেখলাম, মন আমার মুখের দিকে তাকিয়ে খুব শোনার ভান করে, আবার
পিছনের দিকে হাত দিয়ে, লুকিয়ে সেই পুরোনো গামলার মাল নতুন
গামলায়, আর নতুন গামলার মাল পুরোনো গামলায় রাখছে।
হতাশ
লাগল। রাগ লাগল। গঙ্গার জ্যৈষ্ঠের হাওয়া ক্লান্ত শরীরকে জুড়িয়ে দিতে লাগল। ভাবলাম, দিই দুটো গামলাকে
গুঁড়িয়ে? সব ল্যাঠা চোকে। মন অন্তর্যামী। পুরোনো আর নতুন
গামলা থেকে আমারই তৈরি কত কথাদের সাজিয়ে, স্বপ্নদের কাঁদিয়ে,
বাসনাদের ফুঁসলিয়ে, রাগকে থাবড়িয়ে কয়েক ঝলক
করে দেখিয়ে গেল।
মনকে
বললাম, আচ্ছা ভেবে দেখছি। দুটো গামলা ভেঙে গেলে বাঁচব কি নিয়ে? ভাবতেই ভাবতেই দেখি মন আবার গুনগুন করে গাইতে গাইতে পুরোনো গামলার মাল
নতুন গামলায়, আর নতুন গামলার মাল পুরোনো গামলায় রাখছে।
চারদিকে তাকিয়ে দেখি, সবার মাথার মধ্যেই একই কাজ চলছে।
চাঁদের
দিকে অসহায়ভাবে তাকালাম। চাঁদ হেসে বলল, আমার সাথে একজনের দেখা হয়েছিল, মানুষটা একটা বটগাছের তলায় বসে দুটো গামলাই ভেঙে ফেলেছিল।
আমি
বললাম, তার মন কিছু বলল না?
চাঁদ
বলল, আমিও
জিজ্ঞাসা করেছিলাম একই কথা। সে বলেছিল, মন আসলে ওই দুই
গামলার মধ্যের ছায়া।
আমি
চীৎকার করে বললাম, না না, আমি নিজের চোখে দেখেছি সে মাল চালাচালি করে,
এই গামলা থেকে ওই গামলায়।
চাঁদ
হেসে বলল, সে চালাচালি করে, না তুমি?
ঠেক
খেলাম। এক খণ্ড মেঘ এসে চাঁদের মুখ ঢাকল। গঙ্গার বাতাস যেন যুগান্তর থেকে বেয়ে এসে
বলল, সে
তুমি... তুমি... তুমি.....
মেঘ
সরল। চাঁদ বলল, চিনলে তাকে?
বললাম
না কিছু। জিজ্ঞাসা করলাম,
সে মানুষটা কে ছিল?
চাঁদ
বলল, তথাগত।
Very nice sir
ReplyDelete