Thursday, July 18, 2019

২২


      সদ্য গৃহপ্রবেশের পুজো শেষ হল। বাড়ি ভর্তি প্রচুর মানুষ। বাচ্চাকাচ্চাদের দৌরাত্ম্য। বৃদ্ধ পুরোহিত মশায়কে চা জল খাওয়ানোর দায়িত্ব পড়ল আমার উপর। 

চেয়ারে বসে বললেন, আমায় নিয়ে ব্যস্ত হোয়ো না। এক কাপ চা দিতে বলো। সকাল থেকে না খাওয়া, আর কিছু খাব না। 
      মা ওনার জন্য সাগু মেখে রেখেছিলেন। বললাম, মা আপনার জন্য একটু সাগু মেখে রেখেছেন, দিই এখন?
      উনি হাইপাওয়ারের চশমার ভিতর দিয়ে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে একটু হেসে বললেন, মাখা হয়ে গেছে?

      অল্প একটু সাগুমাখা খেয়ে, চায়ের কাপটা নিয়ে পা'টা একটু ছড়িয়ে চেয়ারে বসলেন। বললেন, কোমরটা ধরে গেছে জানো। বয়েস হল প্রায় আশি ছুঁই ছুঁই, আর কদ্দিন বলো?
      কিছু বললাম না। এর তো কোনো প্রত্যুত্তর হয় না।
      চায়ের কাপটা টেবিলে নিজেই উঠে গিয়ে রাখলেন। তারপর চেয়ারে বসে বললেন, দেখো, লোকের বাড়ি কত ঠাকুরের মূর্তি দেখি, এই যে এত মূর্তির পুজো, গঙ্গায় বিসর্জনের পর সব সেই জল। আমার পয়সা-কড়ি কোনোদিন হয়নি তেমন একটা। ছেলেটাও তেমন কিছু করে না। কিন্তু অশান্তিকে বুক চিতিয়ে জাগিয়ে রাখার কোনো কারণ আছে বলো? সব শেষ হয়, সবই ফুরোয়, সময় না তোমার, না আমার। কেন যে লোকের এত দ্বেষাদ্বেষি বুঝি না, অবশ্য এই সহজ কথাটা বোঝাও কি খুব সোজা? মানুষ নিজের বুদ্ধিতে সবটা বুঝতে যায়, অথচ বুদ্ধিটা কতটা পাকল সে খোঁজ রাখে না।

      মানুষটা আজ নেই। ওনার বাড়ির সামনে দিয়ে যতবার আসি ততবার মনের মধ্যে একটা পরিচ্ছন্নতার সুখ অনুভব করি। এমন সাদামাটা জীবন। এমন নির্লোভ নিরাসক্ত বেঁচে থাকার ছন্দ। তার কি কোনো ক্ষোভ, কোনো অভাব, কোনো দুঃখ ছিল না? মনে হয়নি। কিন্তু সেই সবের চাপে তিনি ফুরিয়ে যাননি, এমন একটা বোধকে জীবনের মূলমন্ত্র করে তুলতে পেরেছিলেন। বিশ্ব উষ্ণায়নের চাইতে মনো উষ্ণায়ন কি কম সমস্যার? এই মানুষগুলোর হাঁটাচলার মেঠো পথটা হারালে বড় মুশকিল। তাই রাস্তাটায় একবার চোখ বুলিয়ে রাখা।

No comments:

Post a Comment