Wednesday, December 2, 2020

আমিও ফিরব


দাঁড়ান আমিও ফিরব...


      দাঁড়ালাম। উনি দোকানের ঝাঁপ নামিয়ে একগাল হেসে বললেন, শীতটা জম্পেশ পড়ল কিন্তু বলুন?

      আমি সামনের পুকুরের জলে চাঁদের ছায়া দেখতে দেখতে মনে মনে একটা গান গুনগুন করতে করতে ভাবছি, গ্রামের দিকে থাকলে এসব দৃশ্য দেখা যায়.. আর কলকাতায়... রাত আর দিনে তফাত শুধু ঘুমে... ধুর...

      চলেন...

      আমি আর বিশুদা পাশাপাশি হাঁটছি। বিশুদার মুখে মাস্ক নেই। বললাম, আপনারা এদিকে এত হেলাফেলা করছেন.... মাস্কটাস্ক...

      তা ঠিক। আপনি তো বেশ মাস্ক পরেছেন... তা ভালো... আমার আর ওসব...

      তা ঠিক নয় বিশুদা... এটা সবার পরাই উচিৎ..

      আরে ভাই গেল মাসে আমার তো কি শ্বাসকষ্ট, মনে হচ্ছে বুকের উপর গদাইয়ের মা যেন চেপে বসে...

      মনে মনে গদাইয়ের মায়ের ছবিটা ভেসে উঠল...

      তারপর?

      তারপর ওরা হাস্পাতালে নিয়ে গেল... সেকি আর নেয়? এই টেস্ট ওই টেস্ট করতে বাইরে রেখে দিল.. বলল পজিটিভ হলে তবে ভিতরে নেবে...

      তারপর?

      তারপর আর কি, ভিতরে নেওয়ার আর দরকারই হল না... বাইরেই....

      মানে?!!

      হ্যাঁ তো, তাই আমার আর মাস্কের দরকার নেই রে ভাই... তবে আপনারা যে পরছেন এটা খুব ভালো... আমি দোরে দোরে যাই বলতে... কিন্তু ভাষা পাই না... এমনকি মাস্ক নিয়ে মুখেও লাগাতে গেছি কয়েকজনের... তাই কি হয়.. তারা কি মানে? আপনি আচরি ধর্ম....

      আমি বিশুদার দোকানের চারটে ডিম হাতে দাঁড়িয়ে পড়লাম। কোথাও পিউ কাঁহা ডাকছে। আমার দরদর করে ঘাম হচ্ছে। চশমা মাস্ক চাপা শ্বাসে ঝাপসা। কিচ্ছু দেখতে পাচ্ছি না। হঠাৎ চশমার কাঁচদুটো আঙুল দিয়ে বিশুদা পরিষ্কার করে দিয়ে বলল, আহা দাঁড়িয়ে কেন? ভয় পেলে বুঝি? আরে রাম রাম... ভয় পাবেন না...

      এই বলে বিশুদা হঠাৎ অন্ধকারে হাত বুলিয়ে একটা বড় বস্তা মত কিছু আমার হাতে দিয়ে বলল, এতে বেশ কিছু মাস্ক আছে। আমরা যারা নিজের দোষে করোনায় এদিকে এসেছি তারাই চাঁদা তুলে কিনেছি। আপনি যদি একটু বিলি করে দেন তবে আমাদের আত্মা একটু প্রায়শ্চিত্ত করতে পারে.... পারবেন না?

      বিশুদা আমার হাতদুটো ধরে। চোখের জলের উপর চাঁদের আলো চিকচিক করছে। আমি জীবন মরণের সীমানা হারিয়ে বায়বীয় বিশুদাকে আলিঙ্গন করে বললাম খুব পারব... নিশ্চয়ই পারব।

No comments:

Post a Comment