Tuesday, June 11, 2019

৬০


(স্থান - রাজদরবার। বাইরে প্রজাদের কোলাহল)
রাজা - মন্ত্রী, প্রজারা ক্ষিপ্ত কি কারণ?
মন্ত্রী - মহারাজ উহারা আইন-শৃঙ্খলা কায়েম করিবার আবেদন আনিয়াছে।

রাজা ( ব্যাঙ্গাত্মক হাসিয়া) - কি বলো মন্ত্রী, প্রজারা শৃঙ্খলের মধ্যে থাকিতে চায়? হাসাইলে। জন্মাবধি শুনিয়া আসিতেছি মানবাত্মা বিহঙ্গের ন্যায় দুই পক্ষ মেলিয়া চায় উড়িবারে। তাহারে রুধিতে গেলে বাধে অনর্থ। তবে কি কারণে উহারা শৃঙ্খল পরিতে চায় স্বেচ্ছায়? শুনি নাই কভু মুক্ত বিহঙ্গ ধরা দিল আপনারে বিনা প্ররোচনায় লৌহ পিঞ্জরে! কহো মন্ত্রী, শুনি।
মন্ত্রী নতমস্তকে নিরুত্তর। বিদূষকের ওষ্ঠে মৃদু হাসি।
রাজা - কি হেতু কৌতুক দেখি বিদূষক তোমার চঞ্চল ওষ্ঠদ্বয়ে?
বিদূষক - মহারাজ অপরাধ না নেন যদি...
রাজা - বলো

বিদূষক - কয়েক জন ব্যক্তিকে দিয়াছেন পূর্ণ স্বাধীনতা। একের স্বাধীনতা দশের উপর অত্যাচার হইয়া নামিয়াছে করাল বজ্রদর্পী মেঘরাশির ন্যায়। নাহি দেয় বারি, নির্দোষ জীবেরে হানে করাল আঘাতে। 
আইন-শৃঙ্খলা মহারাজ দেয় স্বাধীনতা সর্বস্তরে সর্ব মানবে। বিধাতা যেরূপে কঠোর নিয়মে সৃজিলেন এ ধরা, কঠোর শৃঙ্খলে করিছেন শাসন যুগযুগান্তর ধরি নির্ভুল তাহা, কারণ সার্বজনীন মহারাজ সে দৈবের বিধি। স্বয়ং না পারেন খণ্ডিতে। নারিলেন রুধিতে কুরুক্ষেত্রসম প্রলয়, আপনি হইয়া সর্বভূতমহেশ্বর।

সেই হেতু ক্রন্দন আজ ক্ষুব্ধ হইয়া মাগিছে বিচার রাজা আপনার দ্বারে। আইন-শৃঙ্খলা আনো, আনো প্রতি মানবের সমানাধিকার। দিয়ো না কাহারো হস্তে পূর্ণ স্বাধীনতা, হইবে দুর্জন সে মদত্ততায়। সহস্র শাস্ত্র পুরাণ গাহে অহংকারসম পাপ নাই এ জগতে মহারাজ!
রাজা - মূঢ়, কূট রাজতন্ত্র নাহি জান তুমি। সরল চিত্তে যা কহিলে তা কাব্য বিদূষক, নহে রাজধর্ম!
বিদূষক - ক্ষমিবেন মহারাজ। অনন্ত জলরাশি বক্ষে যে ফেনিল সাগর, সেও মাগে আপনার স্থান ধরিত্রীর মাটির পরে। সেই রূপ সর্ব ধর্মের মূল যে মানবধর্ম তাহারে উপেক্ষিয়া চাহ যদি রাজসিংহাসন, হইবে না তাহা। বুদবুদের ন্যায় মিলাইবে সে দর্প কালচক্রে দলি। জাগো রাজা, মুক্তি দাও প্রজার আবেদন আইন প্রতিষ্ঠায় - সমদৃষ্টিতে জন্ম যাহার। সেই সভ্যতার ভিত্তিভূমি। না করিও কলঙ্ক লেপন অন্ধমদমত্ততায়, ক্ষমিবে না ইতিহাস, আগামী প্রজন্ম মহারাজ!
বিদূষক বিতাড়িত।


No comments:

Post a Comment